জান্নাত ও জাহান্নামের গুণাগুণ

জান্নাত ও জাহান্নামের গুণাগুণ

1- “যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন মাবূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। ঈসা আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল এবং তাঁর সেই কালেমা যা তিনি মারইয়ামের মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন ও তাঁর সৃষ্ট রূহ। আর জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য।@ তবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন; তার আমল যাই হোক না কেন।”

7- “যখন আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করলেন, তখন তিনি জিবরীল ‘আলাইহিস সালামকে জান্নাতে প্রেরণ করে বললেন:* তুমি জান্নাতের দিকে তাকাও এবং এর অধিবাসীদের জন্য আমি যা প্রস্তুত করে রেখেছি তাও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ কর। জিবরীল জান্নাত দেখে ফিরে আসলেন। তারপরে বললেন: আপনার ইজ্জতের কসম! যে কোন ব্যক্তি এটা সম্পর্কে শোনা মাত্রই সেখানে প্রবেশ করবে। তারপরে আল্লাহ জান্নাতের চারপাশে কষ্টকর বিষয় দ্বারা ঢেকে দেওয়ার জন্য আদেশ করলেন। তারপর বললেন: তুমি আবার তা দেখে এসো এবং তার অধিবাসীদের জন্য যা প্রস্তুত রেখেছি, তা পর্যবেক্ষণ কর। তারপর জিবরীল জান্নাতের দিকে নজর দিলেন, তখন সেখানে সব কষ্টকর বিষয়গুলো দেখে বললেন: আপনার ইজ্জতের কসম! আমি ভয় পাচ্ছি যে, সেখানে কেউই প্রবেশ করতে পারবে না। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বললেন: যাও জাহান্নাম দেখে এসো এবং সেখানে আমি তার অধিবাসীদের জন্য যা প্রস্তুত করে রেখেছি, তা পর্যবেক্ষণ কর। তখন তিনি সেখানে তাকালেন আর দেখতে পেলেন যে, তার এক অংশ অন্য অংশের উপরে আছড়ে পড়ছে। তিনি ফিরে এসে বললেন: আপনার ইজ্জতের কসম! এখানে কেউ প্রবেশ করবে না। তখন আল্লাহ তা‘আলা তার চারপাশে প্রবৃত্তির লালসা বা কামনা-বাসনা দ্বারা ঢেকে দেওয়ার আদেশ দিলেন। তারপরে তাকে বললেন: যাও, এবার দেখে এসো। তিনি সেখানে তাকানো মাত্র দেখলেন তার চারপাশে সব কামনা-বাসনার বস্তুগুলো দ্বারা আবৃত রয়েছে। তখন তিনি ফিরে এসে বললেন: আমি ভয় পাচ্ছি যে, যেই সেখান থেকে বাঁচার চেষ্টা করুক না কেন, সে তাতে প্রবেশ করবেই।”

19- জান্নাতীদের যখন জান্নাতে দাখিল করা হবে, তখন মহান বর্কতময় আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা কী চাও যে, আমি তোমাদের আরো বেশি দিই?’ তারা বলবে, ‘তুমি কি আমাদের মুখমণ্ডল উজ্জল কর নি? তুমি কি আমাদেরকে জান্নাতে প্রবিষ্ট কর নি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও নি?’ অতঃপর আল্লাহ পর্দা সরিয়ে দিবেন (এবং তারা তাঁর চেহারার দর্শন লাভ করবে, তখন তারা উপলব্দি করবে) তাদের এমন কোনো জিনিস প্রদান করা হয় নি যা তাদের নিকট তাদের রবকে দেখা অপেক্ষা বেশি প্রিয়।

24- “সর্বশেষে যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে, তার সম্পর্কে অবশ্যই আমার জানা আছে। এক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে (বা বুকে ভর দিয়ে) চলে জাহান্নাম থেকে বের হবে। তখন আল্লাহ আয্যা অজাল্লাহ বলবেন, ‘যাও জান্নাতে প্রবেশ কর।’ সুতরাং সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে সে ফিরে এসে বলবে, ‘হে রব! জান্নাত তো পরিপূর্ণ দেখলাম।’ আল্লাহ আয্যা অজাল্লাহ বলবেন, ‘যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর।’ তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত তো ভরে গেছে। তাই সে আবার ফিরে এসে বলবে, ‘হে রব! জান্নাত তো ভরতি দেখলাম।’

25- “মৃত্যুকে সাদা-কালো মিশ্রিত একটি ভেড়ার আকৃতিতে উপস্থিত করা হবে*। তারপরে একজন ঘোষক ডেকে বলবেন: হে জান্নাতের অধিবাসীগণ! তখন তারা ঘাড় উঁচু করে তাকাবে আর উক্ত ঘোষক বলবেন: তোমরা কী একে চিনতে পারছ? তারা বলবে: জ্বী, এটা হচ্ছে মৃত্যু। আর এটা প্রত্যেক ব্যক্তিই দেখতে পাবে। তারপরে ঘোষক আবার ডেকে বলবেন: হে জাহান্নোমের অধিবাসীগণ! তখন তারাও ঘাড় উঁচু করে তাকাবে। আর উক্ত ঘোষক বলবেন: তোমরা কী একে চিনতে পারছ? তারা বলবে: জ্বী, এটা হচ্ছে মৃত্যু। আর এটা তাদের প্রত্যেকেই দেখতে পাবে। তারপরে ভেড়াটিকে যবাই করা হবে আর উক্ত ঘোষক বলবেন: হে জান্নাতের অধিাবসীগণ, স্থায়ীত্ব, আর কোন মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামের অধিবাসীগণ! স্থায়ীত্ব, আর কোন মৃত্যু নেই। এরপরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন: وَأَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ যার অর্থ: “আর তাদেরকে পরিতাপ দিবসের ব্যাপারে সতর্ক কর, যখন ফয়সালা হয়ে যাবে অথচ তারা গাফিলতির মধ্যে থাকবে।” [মারইয়াম: ৩৯]। এবং এ সমস্ত লোকেরা দুনিয়াদার, যারা গাফিলতির মধ্যে থাকবে । {وَهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ} যার অর্থ: “আর তারা ঈমানও আনবে না।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৩৯]।

31- কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য থেকে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়াতে সবচেয়ে সুখী ও বিলাসী ছিল। অতঃপর তাকে জাহান্নামে একবার চুবানো হবে, তারপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো ভালো জিনিস দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে? সে বলবে, না। আল্লাহর কসম! হে রব! আর জান্নাতীদের মধ্য থেকে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে দুঃখী ও অভাবী ছিল। তাকে জান্নাতে চুবানোর পর বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি দুনিয়াতে কখনো কষ্ট দেখছ? তোমার ওপর কি কখনো বিপদ গেছে? সে বলবে, না। আল্লাহর কসম! হে আমার রব!