তাওহীদের ফযীলত

তাওহীদের ফযীলত

2- একবার মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সাওয়ারীতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন তিনি তাঁকে ডাকলেন, হে মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ এবং আপনার আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুত। তিনি ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ এবং প্রস্তুত। তিনি আবার ডাকলেন, মু‘আয! তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ এবং প্রস্তুত। এরূপ তিনবার করলেন। এরপর বললেন, “@যে কোনো বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।”* মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি কি মানুষকে এ খবর দিবো না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে? তিনি বললেন, তাহলে তারা এর ওপর ভরসা করে বসে থাকবে। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (জীবনভর এ হাদীসটি বর্ণনা করেন নি) মৃত্যুর সময় এ হাদীসটি বর্ণনা করে গেছেন, যাতে (ইলম গোপন রাখার) গুনাহ না হয়।

3- আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে ‘উফাইর নামক গাধার উপরে ছিলাম। তখন তিনি বললেন: “হে মু‘আয! তুমি কী বান্দার উপরে আল্লাহর হক (অধিকার) এবং আল্লাহর উপরে বান্দাহর হক সম্পর্কে জান?” আমি বললাম: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভালো জানেন। তিনি বললেন: “@বান্দার উপরে আল্লাহর হক হচ্ছে, তারা তাঁরই ইবাদাত করবে আর কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শিরক করবে না। আর পক্ষান্তরে আল্লাহর উপরে বান্দার হক হচ্ছে, যে ব্যক্তি তাঁর সাথে শিরক করবে না, তিনি তাকে আযাব দিবেন না।*” আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি কী মানুষদেরকে এটার সুসংবাদ দিব না? তিনি বললেন: “তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দিও না, তাতে তারা (শুধু এটার উপরে) নির্ভর করে বসে থাকবে।”

4- এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! দুটি আবশ্যককারী বিষয় কী কী? তিনি বললেন: “@যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”

5- “আল্লাহ আমার উম্মাতের মধ্য হতে একজনকে কিয়ামাতের দিন সমগ্র সৃষ্টিজগতের সামনে উপস্থিত করবেন।* তারপরে তার সামনে নিরানব্বইটি খাতা উপস্থাপন করবেন, প্রতিটি খাতা দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। তারপরে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করবেন: তুমি এ থেকে কোন একটিও কী অস্বীকার করবে? আমার সংরক্ষক ফিরিশতাগণ কী তোমার সাথে কোন জুলুম করেছে? ঐ ব্যক্তি বলবে: না, হে আমার রব! তখন আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞাসা করবেন: তোমার কাছে কোন ওযর আছে? সে বলবে: না, হে আমার রব! তখন আল্লাহ বলবেন: আমাদের নিকটে তোমার একটি বিশেষ ভালো কাজ রয়েছে, সুতরাং তোমার উপরে আজকে একটুও জুলুম করা হবে না। তারপরে তিনি একটি কার্ড বের করবেন, যাতে থাকবে: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবূদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।” অতপর বলা হবে: তোমার ওযন তথা পরিমাপকের কাছে উপস্থিত হও! তখন সে ব্যক্তি বলবে: এত বড় বড় খাতার সামনে এ কার্ডটি কী করতে পারবে? তখন তাকে বলা হবে: আজকে তোমার উপরে জুলুম করা হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তারপরে ঐ কার্ডটি এক পাল্লাতে রাখা হবে এবং ঐ সমস্ত খাতা আরেকটি পাল্লায় রাখা হবে। তখন সমস্ত খাতা হালকা হয়ে যাবে আর উক্ত কার্ডটি ভারী হয়ে যাবে। কারণ আল্লাহর নামের থেকে কোন কিছু ভারী হতে পারে না।”

9- “আমলসমূহ ছয় প্রকার ও মানুষ চার প্রকার। দুটি আবশ্যককারী কাজ এবং একটি এমন কাজ যা অপরটির সমান। একটি ভালোকাজ তার দশগুণ সমপরিমাণ আবার একটি ভালোকাজ সাতশত গুণ*। আবশ্যককারী কাজ দুটি হচ্ছে: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শিরক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তির আল্লাহর সাথে কোন কিছু শিরক করে মারা যাবে, সে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে। একটি অপরটির সমান কাজ হচ্ছে: যে ব্যক্তি কোন ভালোকাজের সংকল্প করে, এমনকি তার অন্তর তা অনুভব করে এবং আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে এ নিয়তের ব্যাপারে অবগত থাকেন, তার জন্য একটি ভালোকাজ লিপিবদ্ধ করা হয়। আর যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজ করে, তার উপরে একটি গুনাহ লেখা হয়। আর যে ব্যক্তি কোন ভালোকাজ করে, তার জন্য এর দশগুণ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু দান করে, তার জন্য সাতশতগুণ ‍বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। আর মানুষ (চার প্রকার): ১) দুনিয়ায় স্বচ্ছল কিন্তু আখিরাতে অস্বচ্ছল, ২) দুনিয়াতে অস্বচ্ছল কিন্তু আখিরাতে স্বচ্ছল, ৩) দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই অস্বচ্ছল এবং ৪) দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই স্বচ্ছল।”