ফিকহ ও উসূলে ফিকহ - الصفحة 2

ফিকহ ও উসূলে ফিকহ - الصفحة 2

6- আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই; কিন্তু সিয়াম স্বতন্ত্র, তা আমারই জন্য, আর আমিই তার প্রতিদান দেব।’ সিয়াম ঢাল স্বরূপ অতএব তোমাদের কেউ যেন সিয়ামের দিনে অশ্লীল না বলে এবং হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ তাকে গালি-গালাজ করে অথবা তার সাথে লড়াই-ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, ‘আমি সিয়াম রেখেছি।’ সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদের জীবন আছে, নিঃসন্দেহে সায়িমের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা বেশী উৎকৃষ্ট। সায়িমের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে, তখন সে আনন্দিত হয়; [১] যখন সে ইফতার করে [ইফতারের জন্য সে আনন্দিত হয়]। আর [২] যখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, স্বীয় সিয়ামের জন্য সে আনন্দিত হবে।’’ [বুখারী ও মুসলিম, এই শব্দগুলি বুখারীর] বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে, ‘সে [সায়িম] পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করে একমাত্র আমারই জন্য। সিয়াম আমার জন্যই। আর আমি নিজে তার পুরস্কার দেব। আর প্রত্যেক নেকী দশগুণ বর্ধিত হয়।’ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আদম সন্তানের প্রত্যেক সৎকর্ম কয়েকগুণ বর্ধিত করা হয়। একটি নেকী দশগুণ থেকে নিয়ে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু সিয়াম ছাড়া। কেননা, তা আমার উদ্দেশ্যে [পালিত] হয়। আর আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। সে পানাহার ও কাম প্রবৃত্তি আমার [সন্তুষ্টি অর্জনের] উদ্দেশ্যেই বর্জন করে।’ সায়িমের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে। একটি আনন্দ হল ইফতারের সময়, আর অপরটি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎকালে। আর নিশ্চয় তার মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট।”

13- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুক্ত গোলাম ছাউবান রদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম: আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন, যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বললেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম: আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজের ব্যাপারে, তখন তিনি চুপ থাকলেন। আমি আবার তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এবারও চুপ থাকলেন। আমি তৃতীয়বার তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন: আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন: @“তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি সিজদা করবে; কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা একধাপ বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তোমার একটি গুনাহও মাফ করে দিবেন।”* মা‘দান বলেন: অতপর আমি আবুদ দারদা রদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকেও এ কথা জিজ্ঞেস করলে, তিনি ছাউবান রদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে যা বলেছিলেন, তিনিও সেটাই বললেন।

48- রাসূল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা সালাত পড়ছে যেমন আমরা সালাত পড়ছি, তারা সিয়াম রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারা সাদকাহ করছে।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান করেননি? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল সাদকাহ, ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ এবং তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।” সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন ক’রে নিজের যৌন ক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে?’ তিনি বললেন, “কি রায় তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে? অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কাম-ক্ষুধা নিবারণ করে, তাহলে তাতে তার পুণ্য হবে।

50- “পরুষের জামা‘আতের সঙ্গে সালাত পড়ার নেকী, তার বাজারে ও বাড়িতে সালাত আদায়ের চেয়ে বিশেরও বেশি গুণ নেকী।* তার ধরন, যখন কোনো ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে এবং সালাতই তাকে মসজিদে নিয়ে যায়, তখন তার মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা উন্নত হয় ও একটি পাপ মোচন করা হয়। অতঃপর যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে, যে পর্যন্ত সালাত তাকে (মসজিদে) আটকে রাখে, তখন পর্যন্ত সে যেন সালাতের মধ্যেই থাকে। আর ফিরিশতারা তোমাদের সেই ব্যক্তির জন্য সে পর্যন্ত রহমতের দো‘আ করতে থাকেন -যে পর্যন্ত সে ঐ স্থানে বসে থাকে, যে স্থানে সে সালাত আদায় করেছে। তারা বলেন, ‘হে আল্লাহ! এর প্রতি দয়া কর, হে আল্লাহ! একে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ! এর তাওবাহ কবুল কর।’ (ফিরিশতাদের এই দো‘আ সে পর্যন্ত চলতে থাকে) যে পর্যন্ত সেখানে কাউকে সে কষ্ট না দেয়, যে পর্যন্ত সেখানে সে ওযু না ভাঙ্গে ।”

64- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট আসলে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কীভাবে আপনাকে সালাম দেব তা জানলাম। তবে কীভাবে আপনার উপর সালাত (দরূদ) পেশ করবো?* তিনি বললেন, তোমরা বলো:اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ». অর্থ“হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের উপর এবং মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষন করো। যেমন তুমি রহমত বর্ষন করেছো ইবরাহীমের উপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! তুমি বরকত নাযিল করো মুহাম্মাদের উপর এবং মুহাম্মাদের পরিবার পরিজনের উপর যেমন বরকত নাযিল করেছো ইবরাহীমের উপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহিমান্বিত।”

76- “তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং তোমরা প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।* শাসক দায়িত্বশীল, সে তার প্রজাদের ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। একজন পুরুষ তার পরিবারে দায়িত্বশীল এবং সে তার অধীনদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তার দায়িত্বের বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। আর সেবক সে তার মুনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল এবং সে তার দায়িত্বের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। বস্তুত তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।”

89- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তিকে বড় বা ছোট সেনা দলের অধিনায়ক নিয়োগ করে পাঠানোর সময় বিশেষভাবে তার জন্য আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বনের এবং তার সহ-যোদ্ধাদের সাথে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ দিতেন। তিনি বলতেন, “তোমরা আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো, যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। তোমরা জিহাদ করো, বিশ্বাসঘাতকতা করো না, চুরি করো না, কারো অঙ্গহানি বা অঙ্গ বিকৃত করো না এবং শিশুদের হত্যা করো না। যখন তুমি শত্রু পক্ষের মুশরিকদের মুখোমুখী হবে, তখন তাদেরকে তিনটি বিষয়ের প্রতি আহবান জানাবে। তারা সেগুলোর যে কোন একটির প্রতি সাড়া দিলে তুমি তাদের থেকে তা কবুল করো এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকো। ১. অতঃপর তুমি তাদেরাক ইসলামের দাওয়াত দাও। তারা যদি তা কবুল করে তবে তাদের পক্ষ থেকে তা মেনে নাও এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকো। অতঃপর তাদেরকে স্বদেশ ছেড়ে মুহাজিরদের দেশে চলে আসার আহবান জানাও এবং তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তারা যদি এ কাজ করে তবে যেসব সুযোগ-সুবিধা মুহাজিরগন পাবে তারাও তা পাবে এবং মুহাজিরদের উপর যেসব দায়দায়িত্ব বর্তাবে তা তাদের উপরও বর্তাবে। তারা যদি (স্বদেশ ত্যাগ করতে) অসম্মত হয় তবে তাদের জানিয়ে দাও যে, তারা বেদুইন মুসলমানদের সমান মর্যাদা পাবে, তাদের উপর আল্লাহর সেই সব হুকুম জারি হবে যা মুমিন মুসলমানদের উপর জারী হয় এবং তারা গনীমত ও ফাই-এর কিছুই পাবে না, তবে যদি তারা মুসলমানদের সাথে মিলে জিহাদ করে। ২. তারা যদি ইসলামে দাখিল হতে অস্বীকার করে তবে তাদেরকে জিযয়া দিতে বলো। তারা যদি তা দেয় তবে তাদের নিকট থেকে তা গ্রহণ করো এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকো। ৩. তারা যদি জিযয়া দিতেও অস্বীকার করে, তবে তুমি তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। আর তুমি কোন দুর্গ অবরোধ করলে পর তারা তোমার নিকট আল্লাহর যিম্মাদারি এবং তোমার নবীর যিম্মাদারি লাভের আশা করলে তুমি তাদের জন্য আল্লাহর যিম্মাদারি এবং তোমার নবীর যিম্মাদারি দান করবে না, তবে তোমার নিজের জিম্মাদারী ও তোমার সাথীদের জিম্মাদারী দান করো। কারণ, তোমাদের নিজেদের ও তোমাদের সাথীদের যিম্মাদারি ভঙ্গ করা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যিম্মাদারি ভঙ্গ করার চেয়ে তোমাদের জন্য অধিকতর সহজ। আর তুমি কোন দূর্গ অবরোধ করলে পর তারা তোমার নিকট আল্লাহর হুকুম মানতে চাইলে তুমি তাদেরকে আল্লাহর হুকুমের ওপর রাখবে না, বরং তোমার হুকুম মানতে বাধ্য করো, কারণ তুমি জান না তাদের ব্যাপারে তুমি আল্লাহর হুকুম সঠিকভাবে জানতে পারবে কি পারবে না।